নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের শহরাঞ্চলের বস্তিতে ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ সন্তান প্রসব হচ্ছে অস্ত্রোপচার বা সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে। বস্তির বাইরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ ও পৌরসভা এলাকায় ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে, যা হাসপাতালে আসা মোট গর্ভবতী মায়ের ৮৭ শতাংশ।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘তৃতীয় বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে (বিইউএইচএস) ২০২১’ শীর্ষক এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়।
দেশের ১১ সিটি করপোরেশনে বস্তি ও বস্তির বাইরে এবং জেলার পৌরসভার যেসব এলাকায় ৪৫ হাজারের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে, সেসব এলাকায় এ জরিপ করা হয়। গত ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি-১০ জুন পর্যন্ত দেশের ১২-৪৯ বছর বয়সী বিবাহিত নারী, ১৫-৫৪ বছর বয়সী বিবাহিত পুরুষ, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং সমাজের নেতাদের ওপর এ জরিপ পরিচালিত হয়।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন, এমন নারীদের ক্ষেত্রেও সিজারিয়ান ডেলিভারি বেড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া বস্তির বাইরে থাকা নারীদের ৭৭ শতাংশের সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন শহরাঞ্চলের এমন ৭৫ শতাংশ ও বস্তির ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ ডেলিভারি হচ্ছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে।
জরিপে উঠে এসেছে, বস্তির নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিজার হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। সবচেয়ে কম হয়েছে এনজিওতে, যা ২৫ শতাংশ। বস্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর মাঝেও সবচেয়ে বেশি ৮৭ শতাংশ সিজার হয়ে থাকে বেসরকারি হাসপাতালে। এ ছাড়া বেসরকারি ও এনজিওর সেবা পাওয়াদের ৫১ শতাংশ সিজারে হয়ে থাকে। সরকারি হাসপাতালে সিজার হচ্ছে ৩৭ শতাংশ ও এনজিওর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ৪৭ শতাংশ নারীর।
জরিপে বলা হয়, দেশে বর্তমানে প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) সবচেয়ে বেশি পৌরসভার এলাকাগুলোতে, ২ দশমিক ২২ শতাংশ। এই হার সিটি করপোরেশনের বস্তিতে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ ও বস্তির বাইরে ১ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য গর্ভবতী নারীরা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে গেলেই তাদের সিজার করে দেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজন ছাড়া সিজার হয় না। কারণ সিজার হলে তাদের আলাদা কোনো লাভ নেই। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে সিজার হলেই অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। তারা সব সময় ব্যবসায়িক স্বার্থ লালন করে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি আমাদের আরো বাড়াতে হবে। তাহলে শিশু ও মাতৃমৃত্যু কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা সেবাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বস্তি এলাকায় জন্মহার কমছে। বস্তি ও দরিদ্র মানুষের মাঝেও বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। সবক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। বস্তি এলাকায় গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার ও প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার বেড়েছে। এ ছাড়া বস্তিতে বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ যাচ্ছে। তবে সেখানকার মানুষ স্যানিটেশনে পিছিয়ে আছে।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন নিপোর্টের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম বাদল, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহান আরা বানু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা।