নেত্রকোনা প্রতিনিধি

আরিফুল ইসলাম ফালাক নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের একজন মাঝারি কৃষক। তিনি চলতি মৌসুমে ২৩ একর জমিতে বোরো আবাদ করেন। প্রতিবছর একর প্রতি ফলন পেতেন ৫০ মণের মতো। এবার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে আধপাকা ধান কাটতে বাধ্য হন।

তবে তিনি প্রতি একরে ২৫-৩০ মণের বেশি ধান পাননি বলে জানান। এখন রোদের অভাবে ধান শুকাতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।

তিনি আরো জানান, ধান কাটার যন্ত্র (হারভেস্টর) দিয়ে কাটায় শ্রমিক সংকটে ভুগতে হয়নি। হারভেস্টরে এক-দেড় ঘণ্টায় এক একর ধান কর্তন করে ফেলে। এ পরিমাণ ধান এর আগের ১৫ শ্রমিক দিয়ে কাটাতে লাগত তার একদিন। এখন মেশিনে একদিনেই অধিক ধান কাটা যাচ্ছে। এর ফলে কাটা ধানের পরিমাণ একসঙ্গে বেশি হয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত জায়গার সংকুলান না থাকায় একস্থানে টিকি (মজুত) দিয়ে রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত রোদে ভেজা ভাব দূর করতে না পারলে ধান গরম থাকে ও রং নষ্ট হয়ে যায়।

গত কয়েক দিন ধরে আকাশ মেঘলা ও মাঝে মধ্যে হালকা-পাতাল বৃষ্টি পড়ায় ধান শুকানো নিয়ে সমস্যায় আছেন। একদিনের রোদ ছাড়া ভেজা ধান কিনছে না ব্যাপারীরাও। কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।

এ ছাড়া খালিয়াজুড়ী সদরের শাহআলম, বকুল মিয়া ও উত্তর পাড়ার নয়নপাড়ার স্বাধীন বর্মন কয়েকজন কৃষক আক্ষেপ করে জানান, তেল, সার, ধান রোপণ, বাছানো ও কর্তন এবং ওষুধসহ আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে একর প্রতি ধান ফলাতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আধপাকা অপুষ্ট ধান কাটার পর তাদের খরচ না ওঠার সম্ভাবনা বেশি। অপুষ্ট ধান ক্রয়ে ব্যাপারীদের অনীহা ও ভেজা ধান না কেনায় কম দর পাচ্ছেন তারা।
নেত্রকোনার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন শনিবার বিকেল ৩টার দিকে ধনু নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ২২ সে.মি. দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২১ এপ্রিল বিপৎসীমার ৩১ সে.মি. এ উঠেছিল। এখন পর্যন্ত হাওরে কোন বাঁধ ভাঙেনি জানান তিনি।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী জানান, জেলা হাওর এলাকায় ইতিমধ্যে ৮২ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে। হাওর এলাকাসহ জেলায় এক লক্ষ ৮৪ হাজার ৫৭৫ হেক্টরের মধ্যে সব মিলিয়ে বোরো আবাদে কর্তনের হার পাঁচ ভাগ।