শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি শুরু ২৩ জানুয়ারি। এবারের ভর্তি ফি প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কোন খাতে কত টাকা নেয়া হবে এসব তথ্য দিতে গড়িমসি করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ভর্তি কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২৩ জানুয়ারি স্নাতক প্রথম বর্ষে চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ভর্তিতে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন জিএসটিতে।
এ দিকে ভর্তি ফি ১৫ হাজার টাকা করার প্রতিবাদে রবিবার দুপুর ১টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভর্তিচ্ছুরা। বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ছিল আট হাজার এক শ টাকা; এখন তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার করা হয়েছে। যা এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ, এটা অমানবিক ও অযৌক্তিক। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।’
তিনি বলেন, এ ছাড়া দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন যাদের ভর্তিও অনিশ্চিত হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভর্তি–ইচ্ছুক এক শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, গুচ্ছ কমিটি আগে প্রাথমিক ভর্তির সময় পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে এই বলে যে, এ টাকা চূড়ান্ত ভর্তির সময় সমন্বয় করা হবে। কিন্তু এখন ভর্তি ফি ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগেরবার ছিল আট হাজার এক শ টাকা, এখন এক লাফে দ্বিগুণ। আমরা বেশির ভাগই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই কম খরচে ভালোমানের পড়াশোনা করার জন্য। যাতে আমাদের পরিবারে চাপ কম পড়ে। এখন এ রকমভাবে যদি আমাদের ওপর জুলুম করা হয়, তাহলে আমরা মধ্যবিত্তরা কি পড়াশোনা ছেড়ে দেব। এ বিষয়ে শাবিপ্রবির প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আরেক ভর্তিচ্ছু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এত মাস ঘরে বসায় রাখছে। তারপর হঠাৎ দু দিনে ১৫ হাজার টাকা ভর্তি ফি করা হয়েছে। আমরা রীতিমতো অবাক হয়েছি। এটা কি কখনো শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারে? কখনো হতে পারে না। আর এত টাকা যখন নেবে, তাহলে আগে থেকে কর্তৃপক্ষের বলা উচিত ছিল।’
শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে কোন খাতে কত টাকা নেয়া হচ্ছে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মো. ফজলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে আমার কাছে এর রশিদ নেই। আমাকে ২-১ দিন সময় দিন। আমি খুঁজে বের করতে পারলে তথ্য দিতে পারব। ভর্তি যেহেতু সোমবার থেকে, তাই আজকেই (রবিবার) এ তথ্য প্রয়োজন জানিয়ে আবার প্রশ্ন করলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, খাতওয়ারি ভর্তি ফি নির্ধারণ কমিটিতে সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার ও সদস্যসচিব হিসেবে ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুল আলম, অধ্যাপক ড. এস এম সাইফুল ইসলাম, সিইপি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম।
খাতওয়ারি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, এটা তো একাডেমিক কাউন্সিলে পাস হয়েছে। খাতওয়ারি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা তো আমার মুখস্থ নেই। এটা পেতে ভর্তি কমিটির সভাপতি ও সদস্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভাপতি ও খাতওয়ারি ভর্তি ফি নির্ধারণ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার বলেন, ভর্তি ফি নির্ধারণ একাডেমিক কাউন্সিলের কাজ। এ তথ্য আমরা দিতে পারব না। এ তথ্য রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
তবে অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার যেহেতু খাতওয়ারি ভর্তি ফি নির্ধারণ কমিটির সভাপতি তাই এ বিষয়ে জানতে তাকে আবার কল করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে তথ্য দিতে রাজি হননি। পরে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
এদিকে একাডেমিক কাউন্সিল সেকশনের দায়িত্বে থাকা সহকারী রেজিস্ট্রার রাজীব সি-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, খাতওয়ারি ফি নির্ধারণ কমিটির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য আমাদের দেওয়া হয়নি।
সার্বিক বিষয় জানতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেনি।
উল্লেখ্য, গত বছর খাতের তালিকায় দেখা যায় ভর্তি ফি ৭০০ টাকা, বেতন ৪৫০ টাকা, রেজিস্ট্রেশন ফি ৪৩০, পরিবহন ফি ৫৫০, ইউনিয়ন ফি ১০০, ছাত্র/ ছাত্রী কল্যাণ ফি, ৩০০, লাইব্রেরি ফি ১৭৫, কম্পিউটার ফি ৩০০, রোভার স্কাউট ফি ২৫, বিএনসিসি ফি ২৫, ইনস্যুরেন্স ফি (জীবন বিমা +স্বাস্থ্য বিমা) ২০০ টাকা ছিল।
এ ছাড়া অন্যান্য ফির মধ্যে ছিল পাঠবহির্ভূত কার্যক্রম ১৫০ টাকা, চিকিৎসা ফি ১২০, উৎসব ফি ১০০, পরিচয়পত্র ফি ১৭৫, সিলেবাস ফি ৪০০, শিক্ষাপঞ্জি ফি ১০০, মাদকাসক্তি নির্ণয় ফি ৪০০ টাকা। মোট ৪৭০০ টাকা। এ ছাড়া বিভাগীয় ফি ৩ হাজার, হল সংযুক্তি ফিসহ (৪০০) মোট ৩৪০০ টাকা। সর্বমোট ছিল ৮ হাজার ১০০ টাকা।